World Economy: বিপাকে চিনের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা, বিশ্ব অর্থনীতি কি বিপদে পড়বে?

টি এন নাইনান
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:৪৮


এই বিজ্ঞাপনের পরে আরও খবর

বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক বৃদ্ধিতে যে দেশটি একক ভাবে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে, সেটি হল চিন। বিশ্বের ‘নির্মাণক্ষেত্র’ (ম্যানুফ্যাকচারিং হাব) এবং অন্যতম প্রধান বণিক রাষ্ট্র হিসেবে এই দেশ বিশ্বচাহিদার পরিবর্তনের মুখ্য নির্ণায়ক ও একই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি পণ্যের বাণিজ্যের কার্যত নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বছর, অর্থাৎ ২০২১-এ আশা করা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশ আসবে চিনের ভাঁড়ার থেকেই। যা থেকে এ কথা প্রাঞ্জল হয়ে যায় যে, যদি চিনের অর্থনীতিতে শ্লথ ভাব দেখা দেয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যেও শৈথিল্য দেখা দেবে। এবং যদি চিনের তরফ থেকে চাহিদা কমে আসে, তা হলে খনিজ তেল থেকে ইস্পাত— সব কিছুর দামই পড়তির দিকে ঢলবে। তার প্রভাব দেখা দেবে বাজারের সর্বত্র, টাকার জগৎটিও তার বাইরে থাকবে না।

চিনের সর্ববৃহৎ গৃহনির্মাণ সংস্থা ‘এভারগ্রান্দে’-র মালিকানা ছিল সে দেশের একদা ধনীতম ব্যক্তির হাতে। সেই সংস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় বিশ্ববাজারের সর্বত্র শঙ্কা দেখা দেয়। ‘এভারগারন্দে’-র ব্যবসা আয়তনে বিপুল। সংস্থার অধীনে প্রায় ১৬ লক্ষ বাড়ি নির্মীয়মাণ অবস্থায় রয়েছে। তার ঋণের পরিমাণ ৩,০০০০ কোটি আমেরিকান ডলার (ভারতের বৃহৎ কর্পোরেট ক্ষেত্রগুলির ঋণের পরিমাণের যোগফল)। এই সংস্থা এক বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানির দুই-তৃতীয়াংশের মালিক। সেই কোম্পানিটির মোট মূল্য আবার কোনও গাড়ি তৈরির আগেই ‘ফোর্ড মোটর্‌স’-কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তেমন একটি সংস্থা যখন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে টলটলায়মান হয়ে পড়ে, তখন বাজারে এক দমচাপা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। তেমনই দেখা গিয়েছে গত সপ্তাহে।

Advertisement

এক বছর আগের তুলনায় ‘এভারগ্রান্দে’-র শেয়ারের দাম ইতিমধ্যেই এক-ষষ্ঠাংশ পড়ে গিয়েছে। সংস্থার ঋণপত্রের (বন্ড) দাম কমেছে ডলার প্রতি ২৬ সেন্ট। অর্থাৎ, শুক্রবার অবস্থার আংশিক উন্নতির লক্ষণ দেখা মাত্রই বিনিয়োগকারীরা তাঁদের লগ্নির এক-চতুর্থাংশ ফেরত পাওয়ার আশা করছেন। ‘এভারগ্রান্দে’ সম্প্রতি তার কর্মীদের বেতন দিতে পারেনি। সরবরাহকারীদের পাওনাও মেটাতে পারেনি। কোনও কোনও স্থানীয় প্রশাসন ওই সংস্থার দ্বারা নির্মিত নতুন অ্যাপার্টমেন্ট কেনার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদি সংস্থাটির গণেশ উল্টোয়, তবে চিনের অন্যান্য আবাসন সংস্থাগুলির উপরেও তার প্রভাব পড়বে। এবং বাজারে নতুন বন্ড বা ঋণপত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। যদি ঋণের যোগান কমে আসে, তা হলে চিনের অন্যান্য কার্যকর সংস্থাগুলিও তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে না।

Advertisement
Advertising


যখন চিনের অর্থনীতির এক বড় অংশে এমন অনিশ্চয়তার মেঘ, তখনও সে দেশ মনে করছে, এটি একটি সাময়িক সমস্যা মাত্র। শিগগির সহজেই এর সমাধান সম্ভব হবে। ‘এভারগ্রান্দে’-র ৩,০০০০ কোটি আমেরিকান ডলার ঋণের পরিমাণ আসলে চিনের মোট ঋণের এক শতাংশের ভগ্নাংশ মাত্র। চিনা কর্তৃপক্ষ সংস্থাটিকে পুনর্বিন্যস্ত করতে পারবেন, নিঃসম্পর্কিত ব্যবসাগুলিকে (বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের মতো) বিক্রি করে দিতে সমর্থ হবেন। এমন সঙ্কটে রাষ্ট্রের এগিয়ে আসার বিষয়টি বিশ্ববাজারকে শান্ত রাখবে এবং বিপজ্জনক পরিণতি থেকে রক্ষা করবে।


কিন্তু এখানেও সমস্যা রয়েছে। ‘এভারগ্রান্দে’-র বিপদ আসলে এক বিরাট সমস্যার একটি অংশ মাত্র। গত বছর সেই সমস্যা বেজিংকে বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলেছিল। এই ঋণ কিন্তু শুধু মাত্র আবাসন সংস্থাগুলির মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। এ কথা এখন সকলেরই জানা যে, চিনের ঋণ এই মুহূর্তে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে। তার পরিমাণ দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রায় তিন গুণ। গত কয়েক বছরে এই অনুপাতের মধ্যে ফারাক বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর সরকারের তরফে ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়, যাতে ‘এভারগ্রান্দে’-র মতো সংস্থা পুনরায় ঋণ নিতে গিয়ে থমকে যায়। এর পর বেশ কিছু সংস্থার কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে বেজিং ইঙ্গিত দেয় যে, ঘটনাটির মধ্যে দুশ্চিন্তার বিষয় রয়েছে। এমতাবস্থায় যদি ‘এভারগ্রান্দে’-কে সরিয়ে রেখেও ভাবা যায়, তা হলে অন্য সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং তা অর্থনৈতিক সংকোচন নীতির পরিপন্থী হিসেবেই বিবেচিত হবে। এখন, অর্থনীতির অধোগতি এবং পদ্ধতিগত ঝুঁকির ব্যাপারে বেজিংয়ের মনোভাব কেমন, তা আগামী ঘটনাক্রমই বলে দেবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, যদি ‘এভারগ্রান্দে’-র ঋণের পরিমাণ চিনের মোট ঋণের এক শতাংশেরও কম হয়ে থাকে, তা হলে তার বিশালত্ব অনুমান করেই বলা যায়, এমন সঙ্কটে চিনের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে না।

‘এভারগ্রান্দে’-র ঋণের বিষয়টি যতক্ষণ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ, ততক্ষণ তার আন্তর্জাতিক প্রভাব সীমিত থাকবে। তা সত্ত্বেও বলা যায়, এর একটা দ্বিতীয় দফার প্রভাব থাকবে। সর্বোপরি, এ কথা মানতেই হবে যে, ঋণের এক অবাধ প্রবাহ চিনের আর্থিক বৃদ্ধির দ্রুত গতিছন্দের পিছনে কাজ করেছিল। মনে রাখতে হবে, ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের কালে কঠিনতর ঋণ-নীতি চিনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলে এবং অনিবার্য ভাবে তার ছায়া এসে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। যদি ‘এভারগ্রান্দে’ তার সঙ্কট কাটিয়েও ওঠে, তা হলেও হিসেবনিকেশের খাতায় তা যথাযথ হয়ে উঠতে যে দীর্ঘ সময় নেবে, এ কথা ভারত হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। যে কোনও দিক থেকেই ভাবা যাক না কেন, এই ঘটনা বিশ্বে চিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার পথের ‘জাদুকাহিনি’-র ইতি ঘোষণা করবে। আর্থিক ও কৌশলগত দিক থেকে আমেরিকার প্রতিস্পর্ধী হয়ে ওঠার উপাখ্যানেও ছেদ আনবে। চিনের তরফে এখন খানিক নরম সুরেই তার গান গাইতে হবে, এ কথা স্পষ্ট।

এই বিজ্ঞাপনের পরে আরও খবর

Comments

Popular posts from this blog

Whenever a country turns towords great depression ineconomic front it's obviously brings the questions of races in mainstream Political stage!

Future of American power?!